ইনভার্টার এসি কি? ইনভার্টার নাকি নন-ইনভার্টার এসি, কোনটা ভালো?
আজকাল এসি, ফ্রিজ আর ওয়াশিং মেশিন কিনতে গেলে একটা বিষয় আমরা সবাই লক্ষ্য রাখি যে, এর বিদ্যুৎ খরচ কেমন। কারণ পছন্দের এসি, ফ্রিজ কিংবা ওয়াশিং মেশিন কেনার পর অনেক ক্ষেত্রেই এমন হয় যে আমরা প্রতি মাসে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের বোঝা টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে যাই। কিন্তু বিদ্যুৎ বিলের ভয়ে কি আমরা প্রতিদিনের নিত্য প্রয়োজনীয় এসব জিনিস ব্যবহার বন্ধ করে দেবো? সেটা কখনোই সম্ভব না। তাহলে উপায়টা কি?
আজকাল আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, অনেক ইলেকট্রনিক্স পণ্যের গায়েই এই ইনভার্টার বা নন-ইনভার্টার লেখা থাকে। এসব পণ্যের দাম আর সুবিধাতেও থাকে অনেক পার্থক্য। কোনটি কিনলে আপনার জন্য ভালো হবে? কোন পণ্যটি আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে সুবিধা দেবে? এসব প্রশ্নেরই উত্তর খোজার চেষ্টা করবো আমরা।
প্রথমেই আমরা দেখার চেষ্টা করবো একটি এসিতে ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে। নিচের এ ছবিটির মাধ্যমে সেটা সহজেই সম্ভব।
উপরের ছবিটিতে প্রথমেই বাম দিকে দেখানো হচ্ছে ইনভার্টার প্রযুক্তি নিয়ে। গ্রাফটি লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন এ প্রযুক্তিতে এসি প্রথমে পূর্ণ শক্তিতে চালু হয়। পরবর্তীতে ঘরের আরামদায়ক তাপমাত্রা ঠিক রেখে এসিটি শক্তি খরচ কমিয়ে নিয়ে আসে। এভাবে কম শক্তিতে চলার কারণে কম বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় এবং বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে। অন্যদিকে ডানপাশে দেখানো হচ্ছে নন-ইনভার্টার প্রযুক্তি নিয়ে, যেখানে একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন একটি সাধারণ বা নন-ইনভার্টার এসি ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে শুধুমাত্র অন-অফ হওয়ার মাধ্যমে। অর্থাৎ এসি পূর্ণ শক্তিতে চালু হবার পর ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক অবস্থায় আসলে এসি বন্ধ হয়ে যায়। আবার যখন ঘরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়, তখন এসি আবার চালু হয়। এভাবে বার বার এসি চালু ও বন্ধ হবার কারণে এসি বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যার কারণে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়।
এবার চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক ইনভার্টার এবং নন-ইনভার্টার এসির সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো।
পরিবেশবান্ধবতা
ইনভার্টার এসির মধ্যে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে যে, ইনভার্টার এসির কম্প্রেসারের মোটরটি প্রয়োজনমত নিজস্ব চলার গতি পরিবর্তন করতে পারে। ইনভার্টার এসিতে এমন একটি সেন্সর থাকে যেটি ঘরের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে কম্প্রেশারটিকে পুরোপুরি বন্ধ না করে, মোটরটির চলার গতি কমিয়ে দেয়।
এর কারণেই বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে, যা পরিবেশবান্ধব। কিন্তু অন্যদিকে, সাধারণ এসির কম্প্রেসার বার বার চালু বন্ধ হয় তাই অনেক বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে, যা পরিবেশবান্ধব নয়।
সাশ্রয়
এসির কম্প্রেসার ইউনিট প্রতিবার চালু হবার সময় অনেক বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে। ইনভার্টার এসিতে কম্প্রেসার ইউনিট বার বার বন্ধ এবং চালু না হয়ে, গতি কমিয়ে চলতে থাকে। এভাবে চলতে থাকার কারণে বিদ্যুৎ খরচ কম হয় তাই স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ বিল কম আসে। পাশাপাশি, সাধারণ এসিতে প্রতিবার কম্প্রেসার ইউনিট চালু হবার সময় অনেক বিদ্যুৎ টানে, এ কারণেই মূলত বিদ্যুৎের খরচ বাড়ে, ফলে বিলও বেশি আসে।
শব্দের তীব্রতা
আগেই আপনাদের বলেছি যে, ইনভার্টার এসির কম্প্রেসার নন-ইনভার্টার / সাধারণ এসির মত বার বার চালু এবং বন্ধ হয় না। প্রয়োজনমত গতি কমিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। অন্যদিকে, লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন সাধারণ এসির কম্প্রেসার বার বার বেশ শব্দ করে চালু এবং বন্ধ হয়। এমনকি যখন চলে তখনও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেশ শব্দ তৈরি করে। তাই এ ক্ষেত্রেও ইনভার্টার এসি সাধারণ এসি থেকে এগিয়ে থাকছে।
দ্রুত ঠান্ডা হওয়া
ইনভার্টার এসিতে আপনার ঘর দ্রুত ঠান্ডা হবে, কারণ এসি চালু হবার সময়ে ইনভার্টার এসি সাধারণ এসির চেয়ে বেশি শক্তি খরচ করে দ্রুত ঘর ঠান্ডা করে, এরপর শক্তি কমিয়ে ধীরে চলতে থাকে।
অন্যদিকে সাধারণ এসি চালুর সময় স্বাভাবিক শক্তিতেই চালু হয়, কিছু সময় ধরে ঘর ঠান্ডা করার পর আবার পুরো বন্ধ হয়। ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে আবার চালু হয়।
আশা করি আমাদের আজকের এ লেখা থেকে আপনারা বেশ ভালো একটি ধারণা পেয়েছেন ইনভার্টার এবং নন-ইনভার্টার / সাধারণ এসির পার্থক্য সম্পর্কে। এ পার্থক্য শুধু এসি নয় অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই, মনে করি এরপর থেকে যে কোন ইলেট্রনিক্স পণ্য কেনার সময় আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে বেশ সহজ হবে। আর আমাদের এ লেখা কার্যকরী মনে হলে বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ থাকলো। আপনার এ বিষয়ে আরো কোন পরামর্শ, অভিযোগ এবং তথ্য দয়া করে কমেন্ট সেকশনের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন।
এর সাথে বিদ্যুত বিল নিয়ে দুইটার তুলনা করলে আরো ভালো হতো । ধন্যবাদ ।
আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। 🙂 পরবর্তীতে আমরা এ ধরণের তুলনামূলক লেখা নিয়ে আসার চেষ্টা করবো।
ডিজিটাল ইনভার্টার ওয়াশিং মেশিন সম্পর্কে ধারনা থাকলে দয়া করে আলোচনা করবেন।
আপনার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের নতুন লেখাগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা থাকবে। 🙂