বিটকয়েন কি? বিটকয়েনের ইতিহাস এবং ভবিষ্যত।
বিটকয়েন কি?
বিটকয়েন হচ্ছে বিশ্বের প্রথম সফল ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং লেনদেন ব্যবস্থা। ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মবেশী নামের এক ব্যক্তি বিটকয়েনের ধারণা দেন এবং এর উৎপাদন বা মাইনিং শুরু করেন।
অবাক করা হলেও শুরুতে ১ বিটকয়েনের দাম ছিলো কয়েক টাকা মাত্র। সেই ১ বিটকয়েনই এখন ৭১ লক্ষ টাকার ওপরে (এপ্রিল ২০২৪ অনুযায়ী)! প্রচন্ড এ দাম বৃদ্ধির জন্য একে এখন ডিজিটাল সোনাও বলা হয়। তবে বিটকয়েন কিন্তু লেনদেনেরও দারুণ একটি মাধ্যম। বিটকয়েন বা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির অন্যতম সুবিধা হচ্ছে, নির্দিষ্ট কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা বাদেই আপনি লেনদেন করতে পারবেন। এজন্যই এখানে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে লেনদেন করা সম্ভব।
খুব সহজভাবে বুঝতে চাইলে, আপনি বিটকয়েনকে ইন্টারনেটের সাথে তুলনা করতে পারেন। ইন্টারনেট পুরোপুরি ডিজিটাল, কোনো নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এটা নিয়ন্ত্রণ করে না, ভৌগলিক কোনো সীমারেখা নেই, এটা ২৪/৭ চালু থাকে এবং ব্যবহারকারী একজন অন্যজনের সাথে খুব সহজভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। এবার ইন্টারনেট ভিত্তিক একটি অর্থব্যবস্থার কথা ভাবুন যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে টাকা/অর্থ জমা রাখবেন, বিতরণ করবেন বা যে কাউকে অর্থ পাঠাতে পারবেন তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাহায্য ছাড়াই, এই অর্থব্যবস্থার প্রথম বাস্তব উদাহরণ বিটকয়েন।
বিটকয়েনের ইতিহাস
সেই ১৯৮০ সাল থেকেই ডিজিটাল মুদ্রা তৈরির চেষ্টা অনেকেই করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাদের সে চেষ্টা সফলতার মুখ দেখেনি।
এই অবস্থায় ১৮ অগাস্ট, ২০০৮ এ bitcoin.org ডোমেইন নেইমটি নিবন্ধন করা হয়। এরপরেই ঠিক ৩১ অক্টোবর, ২০০৮ এ সাতোশি নাকামোতো ছদ্মবেশী নামের এক ব্যক্তি একটি হোয়াইট পেপার প্রকাশ করেন। এর কয়েক মাসের মধ্যেই ৩ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে ঐ একই ব্যক্তি বিটকয়েনকে একটি ওপেনসোর্স প্রজেক্ট হিসেবে প্রকাশ করেন এবং তিনি নিজেই বিটকয়েন মাইনিং শুরু করেন। তিনি বিটকয়েনের প্রথম যে ব্লকটি মাইন করেন সেটাকে বলা হয় “জেনেসিস ব্লক”।
এ ঘটনার ৯ দিন পর হাল ফিনে নামে আরেক ব্যক্তি সাতোশি নাকামোতো থেকে ১০টি বিটকয়েন গ্ৰহন করেন। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিটকয়েনের প্রথম বানিজ্যিক লেনদেন হয় ২০১০ সালে, যখন ল্যাজলো নামে একজন প্রোগ্ৰামার ২টি পিৎজা কেনেন ১০,০০০ বিটকয়েন দিয়ে। বর্তমান দাম অনুযায়ী ১০,০০০ বিটকয়েন দাম ৭,৩০০ কোটি টাকার বেশি, তাই অনেকেই মজা করে এই পিৎজা দুটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি পিৎজা বলে থাকেন!
এখন বিটকয়েনকে অনেকেই সোনার সাথে তুলনা করে “ডিজিটাল সোনা” বলে থাকেন। আর ঠিক এই কারণেই বিশ্বের বাঘা বাঘা অনেক ব্যবসায়ী তাদের হাজার হাজার কোটি ডলার বিটকয়েনে বিনিয়োগ করছেন।
বিটকয়েনের ভবিষ্যত
২০০৯ সালে বিটকয়েন যাত্রা শুরু করেছিলো সাধারণ মানুষ যাতে সহজে তার সম্পদে নিজস্ব অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং সমগ্ৰ অর্থব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ যেন সকলের হাতে থাকে। কিন্তু বেশ কয়েকবছর পেরিয়ে গেলেও বিটকয়েনের মূল লক্ষ্য অর্জন এখনো অনেক দূরের বিষয়।
বিটকয়েন বা এ ধরণের ডিজিটাল মুদ্রা সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ এখনো খুব বেশি জানে না, তাই স্বাভাবিক ভাবেই এর ব্যবহার প্রতিদিনের জীবনে তেমন নেই বললেই চলে। অন্যদিকে বিশ্বের ধনী ব্যক্তিরা কিন্তু ঠিকই কোটি কোটি টাকার বিটকয়েন কিনছে প্রতিনিয়ত, তাই বিটকয়েনের মতো অসাধারণ একটি প্রযুক্তিও আবারো কিছু মানুষের কাছে আটকে যাচ্ছে।
কিন্তু এসব কিছু জেনে বিটকয়েন নিয়ে হতাশ হওয়াটা ঠিক হবে না। কারণ বিটকয়েন বিশাল এক পরিবর্তনের সূচনা করেছে কেবল। এখন এই প্রযুক্তির মতো করে আরো অনেক ডিজিটাল মুদ্রা বাজারে চলে এসেছে, যারা বিটকয়েনের সীমাবদ্ধতাগুলো কমিয়ে এনেছে অনেক টুকুই।
এতো মুদ্রা একসাথে কাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে ডিজিটাল মুদ্রার গ্ৰহনযোগ্যতা বাড়াতে। তাই সবমিলিয়ে বিটকয়েন বা ডিজিটাল অর্থব্যবস্থার ভবিষ্যত উজ্জ্বল একথা বলাই যায়।