টিভি রিভিউ – Transtec 32″ Smart Enlightened TV | TLED 32S2

বর্তমানে বিনোদনের জন্য টিভির চ্যানেলগুলো দেখার চেয়ে আমরা স্মার্ট ফোন এ বুঁদ হয়ে থাকতে বেশি পছন্দ করি । ইউটিউব থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের গেমস এ দারুন মজা পাই । কিন্তু ছোট স্ক্রিনে দেখার অসুবিধা, এছাড়া মোবাইল ফোনে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকাটাও চোখের জন্য ক্ষতিকর, আর চার্জ চলে যাওয়ার অশান্তিতো থাকেই । ব্যাটারির উপর চাপও পড়ে । এজন্য আজকাল স্মার্ট টিভির ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে আমাদের দেশে । স্মার্ট টিভি বা টিভির রাজ্যে Sony, LG, Samsung ইত্যাদি ব্র্যান্ডের টিভি কেনাই মানুষ নিরাপদ মনে করে । কিন্তু দাম যে আকাশছোঁয়া, অনেকেরই সাধ্যের অতীত।

বাজারে অল্পসংখ্যক স্থানীয় ব্র্যান্ডের টিভি পাওয়া যায়, যেগুলোর দামও সাধ্যের মধ্যে। কিন্তু সার্ভিস কেমন হবে, টিভিটা কি বেশিদিন চলবে ? টিভি কেনাটাই তো শুধু মূল বিষয় নয়, মানসম্পন্ন টিভি না হলে বিক্রয়োত্তর সেবা পেতেই ঘাম ছুটে যায়।

আমরা বাংলাদেশীরা পণ্যের বিক্রয় পরবর্তী সেবা নিয়ে সবসময়ই কম ভাবি। সবসময় দাম নিয়ে চিন্তা করি । ফলে ভোগান্তিও কম হয় না । দাম যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের মান এবং বিক্রয় পরবর্তী সেবাও।

অনেকের ব্র্যান্ডের টিভি ছাড়া চলেই না । কষ্ট করে ব্যাংক ব্যালেন্স ভেঙে হলেও ব্র্যান্ডের টিভি কেনা চাই ই চাই । এটার অন্যতম কারন হচ্ছে স্থানীয় ব্র্যান্ডের উপর আস্থার অভাব । কমে কিনতে গিয়ে ঠকার ভয়। আর কিছু নয় । অনেকের কাছে ব্র্যান্ডের টিভিটা আবার স্ট্যাটাস এর বিষয় হয়ে থাকে। এখন এটা যার যার নিজস্ব বিষয়, যে স্ট্যাটাস এর তাকিয়ে ব্র্যান্ডের টিভি কিনে বেশি টাকা গচ্চা দিবো, নাকি প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য করে কমে ভালো টিভিটি ঘরে আনবো ?

আর এসব কারনেই আজকের স্মার্ট টিভির রিভিউটি লেখা । ভাল স্থানীয় ব্র্যান্ডের স্মার্ট টিভি যদি কম দামে পান, তবে কেন বেশি টাকা খরচ করা বাইরের ব্র্যান্ডের টিভি কিনে?

ট্রান্সকম বাজারে সম্প্রতি ট্রান্সটেক ৩২ ইঞ্চির স্মার্ট টিভি এনেছে ২৩,৫০০ টাকায় যা ডিসকাউন্ট দিয়ে আপনি পাচ্ছেন ১৮,২০০ টাকায় (ফেব্রুয়ারী ২০২০ এর তথ্যনুযায়ী)। সম্পূর্ণ নাম আর মডেলটি হচ্ছে – Transtec 32″ Smart Enlightened TV | TLED 32S2 । তাহলে টিভিটির মূল সুবিধাগুলো এখন জেনে নিই ।

ডিসপ্লে

যেকোন টিভির ডিসপ্লেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।আগেই বলেছি এটি ৩২” ডিসপ্লের একটি টিভি। এর আনুমানিক অনুপাত (Aspect Ratio) হচ্ছে ১৬ : ৯ । রেজ্যুলেশন (Resulation) হচ্ছে ১৩৬৬x৭৬৮ । এতে HD মানের ভিডিও খুব ভালোভাবে দেখা যাবে, কিন্তু BlueRay অথবা 4k মানের ভিডিও ততটা ভালোভাবে দেখা যাবে না। এই টিভিটির ভিউয়িং এ্যাঙ্গেল (Viewing Angle) হচ্ছে ১৭৮ ডিগ্রি । অর্থাৎ আপনি যদি টিভির সামনে ১৭৮ ডিগ্রির মধ্যের থাকেন তাহলে সর্বোচ্চ ডানে অথবা বামে যেকোন সাইড থেকেও আপনি ভালোভাবেই টিভির ছবি দেখতে পাবেন । এই টিভিতে আপনি আপনার পছন্দমতো ছবি নিয়ন্ত্রন (Picture Control) করতে পারবেন, ছবির উজ্জ্বলতা ও কনট্রাস্ট পরিবর্তন করতে পারবেন । এর কন্ট্রাস্ট অনুপাত (Contrast Ratio) হচ্ছে ১৫০০০০:১ । এছাড়াও বিভিন্ন ছবির মোড (Picture Mode) সেট করা আছে যেমন- স্ট্যান্ডার্ড, মাইল্ড, ডাইনামিক, ইউজার এসব থেকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী মোডটি বেছে নিতে পারেন ।

শব্দের মান / সাউন্ড কোয়ালিটি

টিভিটির সাউন্ড আপনি চারদিক (Surround) থেকে পাবেন, অনেক টিভির সাউন্ড শুনলে কোন নির্দিষ্ট একদিক থেকে সাউন্ডটা আসছে এমনটা অনুভূত হয়, কিন্তু এ টিভির ক্ষেত্রে তা হবে না। এছাড়াও সাউন্ড টোন কন্ট্রোলের জন্য আপনি ব্যাজ্ (Bass)‌, ট্রেবল, ব্যালেন্স এই ৩টি অপশন পাবেন । আবার নিজের পছন্দ অনুযায়ী সাউন্ড কন্ট্রোল করতে পারেন । ৪টি সেট করা অপশন পাবেন স্ট্যান্ডার্ড, মুভি, মিউজিক, স্পোর্টস । ৫ নম্বর অপশনটিতে (ইউজার) আপনি আপনার মতো সাউন্ড সাজিয়ে নিতে পারেন, যেমনটা আপনার পছন্দ ।

কানেক্টটিভিটি

এখানে সাধারণভাবে প্রয়োজনীয় প্রায় সব কানেক্টরই দেওয়া আছে । ক্যাবল/এ্যান্টেনা(Cable/Antenna) থেকে শুরু করে এইচডিএমআই ইনপুট (HDMI Input), কম্পোনেন্ট ভিডিও ইনপুট(Component Video Input), এভি ইনপুট আরসিএ (AV Input RCA), পিসি অডিও ইনপুট(PC Audio Input), ইউএসবি ইনপুট (USB Input(movie)), হেডফোন আউটপুট (Headphone Output), ভিজিএ (VGA), টিএফ ইন(TF IN), কোএক্সিয়েল(Coaxial), ল্যান কানেক্টিভিটি(LAN Connectivity RJ45) দেওয়া আছে ।

রেস্পন্স টাইম এবং স্টোরেজ

রেস্পন্স টাইম একটি টিভির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ।একটি টিভির রেস্পন্স টাইম বলতে যা বুঝায় তা হচ্ছে টিভিটি কত দ্রুত চ্যানেল পরিবর্তন করতে পারছে বা অন্যকোন কাজ করছে, সহজভাবে বলতে গেলে এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেল এ পরিবর্তিত হওয়ার মধ্যকালীন সময় । রেস্পন্স টাইম যত কম হবে তত ভালো। এই টিভির রেস্পন্স টাইম হচ্ছে ৫ মিলিসেকেন্ড অর্থাৎ আপনি যখন চ্যানেল পরিবর্তন করতে যাবেন, তখন চ্যানেলটি মাত্র ৫ মিলিসেকেন্ডের মধ্যে আরেক চ্যানেলে পরিবর্তিত হবে ।

এই টিভিতে স্টোরেজ হিসেবে 1GB RAM এবং 4GB ROM দেওয়া আছে । আমরা স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার কেনার ক্ষেত্রে এ ২টি বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিই । RAM বা ROM এর পরিমান যত বেশি থাকবে তত ভালো। স্মার্ট ফোন এর ক্ষেত্রেও বেশি RAM এর ফোনগুলোরই চাহিদা বেশি । তবে এত অল্প দামে এই স্মার্ট টিভিতে 1GB RAM খারাপ না । RAM অল্প থাকাতে যে অসুবিধাগুলো হয় তা হচ্ছে বেশি ভারী এ্যাপ্লিকেশনগুলো সহজে চলে না, হ্যাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তবে অল্প পরিমান এ্যাপ দিয়ে এটা ভালই চলবে বলে আশা করি ।

পাওয়ার

যেকোন ইলেক্টরনিক্স এ্যাপ্লায়েন্স কেনার ক্ষেত্রে সেই এ্যাপ্লায়েন্সটি চালাতে কি পরিমান বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন পড়বে সেটা জেনে নেওয়া খুবই জরুরী । অন্যথায় অপ্রয়োজনে বিদ্যুৎ খরচ বাড়তে পারে। এই টিভিটি কেনার পূর্বে এর পাওয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে । এর পাওয়ার রেটিং হচ্ছে ১০০-২৪০ ভোল্ট , এসি ৫০/৬০ হার্টজ (Hz) , স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার কনসাম্পশন – ১ ওয়াট এর নিচে ( Stand-by Power Consumption – Less than 1W ), এনালগ টিউনার বিল্ড-ইন করা আছে, কালার সিস্টেম- পাল/সিকেম ( COLOR SYSTEM – PAL/SECAM )।

এক্সেসরিজ

এই টিভিটির সাথে এক্সেসরিজ হিসেবে রিমোট কন্ট্রোল আর টিভি গাইড অর্থাৎ ম্যানুয়াল (Instruction Book), টিভি স্ট্যান্ড (LED Base) দেওয়া থাকবে ।

উল্লেখযোগ্য ফিচার (ই-শেয়ার)

এই টিভিতে ই-শেয়ার (E-share) একটি ফিচার দেওয়া আছে। যার মাধ্যমে আপনার মোবাইল থেকে সরাসরি অডিও অথবা ভিডিও টিভিতে চালাতে পারবেন। আপনার স্মার্ট ফোনটিকে টিভির রিমোট কন্ট্রোলের মতো ব্যবহার করতে পারেন। এ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসকে টিভির সাথে মিরর করতে পারেন। এছাড়াও টিভির স্ক্রিনটিকে আপনার স্মার্টফোনের সাথে মিরর করে, ফোনটিতে টাচ করার মাধ্যমে টিভিটি এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন যেন মনে হবে আপনি টিভিটি টাচ করে নিয়ন্ত্রণ করছেন।

এই ফিচারটি উপভোগ করতে হলে আপনার টিভির এ্যাপলিস্টে যাবেন, সেখান থেকে QR code স্ক্যান করে অথবা লিংক দেওয়া আছে সেই লিংকে গিয়ে এ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারেন । এছাড়াও আপনি সরাসরি এখানে ক্লিক করেও E-share ডাউনলোড করে নিতে পারেন ।

ওয়ারেন্টি

টিভি কেনার আগে ওয়ারেন্টি সম্পর্কে জেনে নেওয়াটা খুবই জরুরী । আর এই টিভিতে আপনি ওয়ারেন্টি হিসেবে ৩ বছরের প্যানেল, ২ বছরের স্পেয়ার পার্টস ও ৩ বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা পাচ্ছেন। যা অন্যান্য স্থানীয় ব্র্যান্ডের তুলনায় যথেষ্টই ভালো।

এখন চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক Transtec TLED 32S2 টিভিটির সুবিধা ও অসুবিধাগুলো।

সুবিধা

  • তুলনামূলক কম দামে স্মার্টটিভি।
  • সাউন্ড কোয়ালিটি ভালো।
  • চওড়া ভিউয়িং এঙ্গেল (Viewing Angle) – ১৭৮ ডিগ্রি ।
  • তুলনামূলক কম Response Time – ৫ মিলিসেকেন্ড ।
  • ই-শেয়ার (E-share) ফিচার ।
  • পরিবর্তনযোগ্য পিকচার মোড ।
  • পরিবর্তনযোগ্য সাউন্ড মোড ।
  • ওয়াইফাই এবং ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ।

অসুবিধা

  • HD হওয়ার কারণে আরো বেশি ভালো মানের ছবি দেখা সম্ভব নয়।
  • টিভির মডেল খুব একটা আকর্ষনীয় নয়।
  • স্টোরেজ স্মার্টটিভির জন্য যথেষ্টই অল্প।

দামের ক্ষেত্রে চিন্তা করলে সবমিলিয়ে স্মার্টটিভিটি ভালোই হবে বলে আশা করছি । আপনারা ব্যবহার করে আপনাদের মূল্যবান মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না । আগামীতে যাতে আরো ভালো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হতে পারি এই কামনায় এখন এখানেই শেষ করছি ।

আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *