সেমি-অটোমেটিক বনাম অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন – আপনার কোনটি প্রয়োজন?
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ওয়াশিং মেশিন আমাদের জীবনে নিত্যপ্রয়োজনীয় এক যন্ত্র। চাহিদা বৃদ্ধির কারণে আর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য বাজারে এখন নানা ধরণের ওয়াশিং মেশিন পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরণের সুযোগ-সুবিধা আর ধরণের উপর নির্ভর করে এগুলোর দামের পার্থক্য হয় অনেক।
এ কারণে ওয়াশিং মেশিন কিনতে গিয়ে প্রায়ই সমস্যায় পড়ে যাই আমরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দামের বড় পার্থক্য হয় সেমি-অটোমেটিক ও অটোমেটিক হবার কারণে। এ লেখায় আমরা এ সেমি-অটোমেটিক ও অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন নিয়ে কথা বলবো। জানার চেষ্টা করবো এদের পার্থক্য, সুবিধা-অসুবিধা আর এ দুটির মধ্যে কোনটি আপনার প্রয়োজন মেটাতে পারবে।
সেমি-অটোমেটিক বনাম অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন
এককথায় বলতে গেলে, সেমি-অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার সব কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয় না। এ ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করতে হলে আপনার নিজের কিছু কাজ করতে হবে।
অন্যদিকে, অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার প্রায় সব কাজই স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়। কাপড় ধোয়ার শুরুতে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ঠিকমতো দিয়ে দিলে আপনার আর তেমন কোন কাজ নেই। এখানে বলে রাখা ভালো, অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন আবার দুরকমের হয়ে থাকে টপ-লোডিং এবং ফ্রন্ট লোডিং।
সেমি-অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন কি ? সুবিধা-অসুবিধাগুলো কি?
বাজারের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে সেমি-অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন। অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের তুলনায় এ ধরণের মেশিনের দাম তুলনামূলকভাবে বেশ কিছুটা কম।
দাম কম হবার অন্যতম প্রধান কারণ, এ মেশিনগুলোতে কিছু কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে আর কিছু কাজ আপনার খালি হাতে করতে হবে।
অধিকাংশ সেমি-অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনে ২টি আলাদা টাব বা অংশ থাকে। একটি কাপড় ধোয়ার জন্য, অন্যটি আপনার কাপড় শুকাবার জন্য।
এই ওয়াশিং মেশিনগুলোতে কাপড় ধোয়ার জন্য কাপড় ধোয়ার নির্দিষ্ট টাব বা অংশে কাপড় দেয়ার পর প্রয়োজনীয় পরিমান পানি, ডিটারজেন্ট পাউডার দিতে হবে। এরপর মেশিন চালু করে প্রয়োজন অনুযায়ী কাপড় ধোয়ার পর, পাইপের মাধ্যমে সাবান পানি বের করে দিয়ে পরিস্কার পানি দিতে হবে। পরিস্কার পানিতে কাপড় ধোয়া হয়ে গেলে, কাপড় শুকাবার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।
ধোয়া শেষ হয়ে গেলে কাপড়গুলোকে উঠিয়ে কাপড় শুকাবার নির্দিষ্ট টাব বা অংশে কাপড় দিতে হবে। কাপড় দিয়ে এই অংশের ঢাকনা বন্ধ করে মেশিন চালু করতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনি পাবেন প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত পানি ঝরানো কাপড়।
উপরের প্রক্রিয়াগুলো থেকে বুঝতেই পারছেন যে, সেমি-অটোমেটিক মেশিনে খালি হাতে করতে হবে এমন বেশ কিছু কাজ আছে। তবে, একথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সেমি-অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের কিছু সুবিধাও আছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, পানি এবং বিদ্যুৎ খরচ অটোমেটিক মেশিনের তুলনায় কম।
একনজরে সেমি-অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের সুবিধা
- অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের তুলনায় দাম কম
- বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলক কম
- পানির খরচ তুলনামূলক কম
- কাপড় ধুতে অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের তুলনায় সময় কম লাগে
একনজরে সেমি-অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের অসুবিধা
- কাপড় ধোয়ার পুরো প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় নয়
- খালি হাতে বেশ কিছু কাজ করতে হয়
- অনেকের মতে কাপড় ধোয়ার মান অটোমেটিক মেশিনের মতো ভালো না
অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন কি ? সুবিধা-অসুবিধাগুলো কি?
নাম দেখে সহজেই বোঝা যায়, এ মেশিনে সব কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে। সুতরাং, এ মেশিন ব্যবহারের সময় খালি হাতে কোন কাজ করার তেমন কোন প্রয়োজন হবে না।
এ ধরণের ওয়াশিং মেশিনে আপনার কাপড়ের ধরণ অনুযায়ী কাপড় ধোয়ার বেশ কিছু ধরণ আলাদাভাবে দেয়া থাকে। আপনার যা করে হবে সেটা হচ্ছে, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সুইচ টিপে ওয়াশিং মেশিনকে জানিয়ে দেয়া যে আপনি কোন ধরণের কাপড় ধুতে চাইছেন। বাকি কাজ মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে করবে।
অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের এ বিষয়টি অনেকটা আধুনিক কাপড় ইস্ত্রী করার যন্ত্রের সাথে মিলে যায়। আধুনিক কাপড় ইস্ত্রী করার যন্ত্রে যেমন কাপড়ের ধরণ অনুযায়ী তাপমাত্রা পরিবর্তন করতে হয়, যন্ত্রে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী, এই অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম। ব্যবহারের শুরুর দিকে কিছু ব্যবহারকারীর কাছে বিষয়টি ঝামেলাপূর্ণ মনে হতে পারে, কিন্তু ব্যবহার করতে থাকলে এক সময় পুরো প্রক্রিয়া সহজ হয়ে আসবে।
অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের আরো দুটি সুবিধা হচ্ছে, এ মেশিনে গরম পানিতে কাপড় ধোয়ার সুবিধাও রয়েছে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি গরম হয়ে কাপড় ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত হবে, সেমি অটোমেটিক মেশিনে গরম পানিতে কাপড় ধুতে হলে পানি গরম করে মেশিনে দিয়ে ধুতে হবে।
এছাড়াও, অটোমেটিক মেশিন কাপড় ধোয়ার পর স্পিনার চালু করে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কাপড়ের পানি ঝরিয়ে দেবে, যেখানে সেমি অটোমেটিকে আলাদা টাবে বা অংশে রেখে পানি ঝরাতে হয়।
অতিরিক্ত বেশ কিছু সুবিধার কারণে অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের দামও সেমি অটোমেটিকের তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।
একনজরে অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের সুবিধা
- কাপড় ধোয়ার সব কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়
- কাপড় ধোয়ার জন্য খালি হাতে কোনো কাজ করতে হয় না
- আধুনিক প্রযুক্তি
- অনেকের মতে কাপড় ধোয়ার মান সেমি অটোমেটিক মেশিনের চেয়ে ভালো
- তুলনামূলক কম জায়গা লাগে
একনজরে অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের অসুবিধা
- সেমি অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের দাম কিছুটা বেশি হয়
- বিদ্যুৎ খরচ বেশি
- পানি বেশি প্রয়োজন হয়
একনজরে সেমি-অটোমেটিক ও অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের পার্থক্য
আপনাদের সিদ্ধান্ত নেবার সুবিধার জন্য এখানে একনজরে সেমি-অটোমেটিক ও অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরছি।
সেমি-অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন | অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন |
অটোমেটিক মেশিনের চেয়ে দাম কম | সেমি-অটোমেটিক মেশিনের তুলনায় দাম বেশি |
পানি খরচ করে কম | পানি খরচ হয় বেশি |
বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলক কম | বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলক বেশি |
খালি হাতে বেশ কিছু কাজ করতে হয় | খালি হাতে তেমন কোন কাজ করতে হয় না |
কাপড় ধোয়ার মান সন্তোষজনক | কাপড় ধোয়ার মান সেমি-অটোমেটিকের চেয়ে ভালো |
সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কম | প্রায়ই নতুন মডেলেগুলোতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যায় |
সবমিলিয়ে বলা যায়, নিঃসন্দেহে অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের অতিরিক্ত কিছু সুবিধা রয়েছে। বাজেট বেশি থাকলে যা আপনি উপভোগ করতে পারেন। তবে, সেমি-অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনকেও খারাপ বলা যায় না, বরং বেশ কম বাজেটের মধ্যেই ওয়াশিং মেশিনের অধিকাংশ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
আশা করি উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা সেমি-অটোমেটিক ও অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনের একটি পরিস্কার ধারণা দিতে পেরেছি, যা আপনাকে সঠিক ওয়াশিং মেশিনটি বেছে নিতে সহায়তা করবে।