আপনার বাবুকে ডায়াপার র্যাশ বা ফুসকুড়ি থেকে মুক্ত রাখার উপায়
নবজাতক বাচ্চাদের নিয়ে মা বাবার চিন্তার অন্ত নেই । বর্তমানে বাচ্চাদের প্রাকৃতিক কাজে ডায়াপার অন্যতম ভূমিকা পালন করে । যখন ডায়াপার এতটা সহজলভ্য ছিল না তখন বাবা মা দের বিশেষ করে মায়েদের অনেক কষ্ট করতে হতো । কিন্তু এখন শীতকালে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ভয়ে মূলত বাবা মায়েরা বাচ্চাদের ডায়াপার পড়াতে যতটুকুও বা সাচ্ছন্দ্য বোধ করে, গরমকালে তো একেবারেই না । এটার অন্যতম কারন হচ্ছে ডায়াপার র্যাশ ।
প্রচন্ড গরমে আমাদের দেশে ডায়াপার র্যাশ বাচ্চাদের প্রায়ই হয়ে থাকে ।
যেসব কারণে ডায়াপার র্যাশ হয়ে থাকে –
১ । বাচ্চার ত্বক যদি অতিরিক্ত সংবেদনশীল (sensitive) হয় ।
২ । ডায়াপার যদি আঁটসাঁট (টাইট) হয় ।
৩ । স্পর্শকাতর ত্বক হলে ।
৪ । প্রথমবারের মতো নতুন কোন খাবার দেওয়ার কারণে।
৫ । কোন ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে ।
প্রাথমিক অবস্থায় এর চিকিৎসা বাসায় করা সম্ভব । অল্প কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে এর তীব্রতর হওয়া থেকে সহজে এড়ানো যাবে ।
১ । শুষ্ক এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা
ডায়াপার এর জায়গাটি অবশ্যই শুষ্ক এবং পরিষ্কার রাখতে হবে । খেয়াল রাখতে হবে যে ডায়াপারটি আপনি ব্যবহার করছেন সেটা যাতে কোনোভাবেই ভেজা না থাকে । অবশ্যই ভালো ডায়াপার ব্যবহার করবেন । যেসব ডায়াপার আরামদায়ক এবং শোষণ ক্ষমতা ভালো সেসব ডায়াপার ব্যবহার করবেন ।
ডায়াপার বদলানোর সময়ে অবশ্যই বেবি ওয়াইপস ব্যবহার করবেন এবং শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন । বেবি ওয়াইপস না থাকলে ভেজা পাতলা কাপড় ও ব্যবহার করতে পারেন। পরে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে । আলতোভাবে পরিষ্কার করতে হবে, অতিরিক্ত ঘর্ষণের কারনেও কিন্তু র্যাশ হয়ে যায়।
২ । ডায়াপার ছাড়া কিছু সময়
যদি হালকা ফুসকুড়ি হয়ে যায় বা লক্ষণ দেখা যায় তাহলে প্রতিবার ডায়াপার খোলার পর পরিষ্কার করে কিছু সময় বাচ্চাকে ডায়াপার ছাড়া রাখবেন । এভাবে কয়েকবার বা কয়েকদিন করে দেখবেন কোন উপকার পাচ্ছেন কি না।
৩ । ডায়াপার ঘন ঘন বদলানো
ফুসকুড়ির কোন প্রকার সম্ভাবনা দেখা দিলেই সাথে সাথে ডায়াপার বদলাতে হবে । প্রয়োজনে দিনে কয়েকবার করে বদলাতে হবে । কারন সামান্য কিছুটা ভেজাতেও তখন এটা তীব্র হয়ে যায় ।
৪ । ডায়াপার আঁটসাঁট না হওয়া
বাচ্চাকে সঠিক মাপের ডায়াপার পড়াতে হবে । বেশি আঁটসাঁট বা টাইট যাতে না হয় খেয়াল রাখতে হবে । ডায়াপার বেশি টাইট হয়েছে কিনা বুঝার জন্য ডায়াপার পড়ানোর পর সামনের দিকে ২ আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেখতে হবে কিছুটা ফাঁকা আছে কি না । এতে জায়গাটিতে বাতাস প্রবেশ করতে পারবে । এতে ফুসকুড়ি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়।
৫ । ডায়াপার র্যাশ ক্রিম ব্যবহার
জিংক অক্সাইড যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করুন যা ত্বককে ফুসকুড়ি হওয়া থেকে রক্ষা করবে । এ ধরনের ক্রিম আপনি যেকোন ফার্মেসিতে পেয়ে যাবেন ।
কম খরচের মধ্যে পেট্রোলিয়াম জেলি যেমন ভ্যাসেলিন অনেকে ব্যবহার করে থাকে । এটা সত্য যে এতে কিছুটা ভালো ফলাফল পাওয়া যায় তবে এটা ডায়াপার র্যাশ ক্রিমের মতো শক্তিশালী না ।
তবে মনে রাখতে হবে, রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোনো ওষুধযুক্ত মলম ব্যবহার করা যাবে না। এ সকল ক্রিমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে । এতে না জেনে ব্যবহার করলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬। ঘরোয়া উপায়ে নিরাময়
তবে ঘরোয়া বেশ কিছু উপায় আছে যার মাধ্যমে আপনার বাচ্চার ফুসকুড়ি খুব সহজেই সারাতে পারবেন । যদিও এগুলো বিজ্ঞানসম্মত না, এমনকি কোন রিসার্চ ও করা নেই । তবে অনেকেই এ পদ্ধতিগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে ভালো ফলাফল পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এর মধ্যে আছে অ্যালোভেরা জেল, টক দই, নারকেল তেল ইত্যাদি।
ডায়াপার র্যাশ প্রায় সব বাচ্চারই কম-বেশি হয়ে থাকে। এটা নিয়ে সামান্য সচেতনতাই এ সমস্যা থেকে দূরে রাখতে পারে আপনার বাচ্চাকে।