ওয়াশিং মেশিন কেনার সময় কি কি বিষয় লক্ষ্য করা উচিত ?
এ বছর বেশ শীত পড়েছে, এই শীতে হাতে পানি লাগানোই কষ্টকর সেখানে কাপড়-চোপড় ধোয়া তো আরো কঠিন ব্যাপার। শুধু শীতই নয়, গরমকালেও কাপড় চোপড় ধোয়া অনেক পরিশ্রমের কাজ । এখন অনেকেই এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে ওয়াশিং মেশিন কিনতে আগ্রহী । কিন্তু কেনার কথা যেমনই মাথায় আসবে ঠিক একই সাথে মাথায় খেলবে নানা ধরনের চিন্তা । সাধ্যের মধ্যে কোন ওয়াশিং মেশিনটা ভাল হবে , কোথা থেকে কিনলে প্রতারিত হবো না, এ ধরণের নানা প্রশ্ন জাগে ।
আমরা মনে করি, কষ্ট করে নিচের লেখাটুকু পড়ে ফেললে ওয়াশিং মেশিন কেনার সময় আপনার প্রয়োজনীয় মেশিনটি খুজে পেতে সমস্যা হবে না।
আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, ভাল একটি ওয়াশিং মেশিন খুব সহজেই কয়েকবছর অনায়াসে চলে যায় । আপনি যদি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ওয়াশিং মেশিনটি কিনতে পারেন তাহলে বেশ লম্বা সময় ধরে আর আপনার এ নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না ।
কোন ব্র্যান্ডের ওয়াশিং মেশিন কেনা উচিত ?
প্রথম যে প্রশ্নটি মাথায় ঘুরতে পারে তা হচ্ছে ওয়াশিং মেশিন কোন ব্র্যান্ডের কিনলে ভাল হয় । আগে চিন্তা করতে হবে আপনি কিরকম চাচ্ছেন ? বাজেটটাই মুখ্য বিষয় ? নাকি ভাল হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ, সে বাজেট যাই হোক ? নাকি বাজেটের মধ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম এমন একটি ওয়াশিং মেশিন !
আমাদের মতামত অনুযায়ী, অবশ্যই আপনার উচিত শেষের অপশনটাই বেছে নেওয়া । বাজারে এ মুহুর্তে ভাল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে যেগুলো আছে সেগুলো হচ্ছে – স্যামসাং, ওয়্যার্লপুল, শার্প , ওয়ালটন , হিটাচি ইত্যাদি।
কোন ওয়াশিং মেশিনটি সবচেয়ে ভালো হবে আপনার জন্য ?
আপনি যদি না বুঝে যেমন তেমন ওয়াশিং মেশিন কেনার জন্য তৈরি থাকেন যেটার কিনা পরবর্তীতে বিদ্যুৎ বিল এবং পানির বিল দিতে দিতে আপনার ঘাম ছুটে গেলো , ঘন ঘন সার্ভিসিং এর জন্য ছোটাছুটি করতে হলো, জামা কাপড় নষ্ট হলো, কাপড় চোপড় ধুতেও অনেক সময় চলে গেলো । তখন সেই ওয়াশিং মেশিনটি আপনার জীবন সহজ তো করবেই না বরং একটা সময় অসহ্য করে তুলবে । সে যেন মড়ার ওপড় খাড়ার ঘাঁর মতো অবস্থা হবে ।
বর্তমান বাজারে ওয়াশিং মেশিনগুলো চমকপ্রদ সব সুবিধা নিয়ে এসেছে । তবে এমতাবস্থায় একটি কথাই বার বার বলতে হয়, চাকচিক্য ভরা বিষয়গুলো থেকে সাবধান থাকা ভাল । সুতরাং আপনার এমন একটি ওয়াশিং মেশিন বেছে নেওয়া উচিত যেটা আপনার জন্য উপযুক্ত হবে ।
![bluekite-washing-machine1-body](http://bluekite.xyz/wp-content/uploads/2019/11/bluekite-washing-machine1-body-1024x683.jpg)
ফ্রন্ট লোডার নাকি টপ লোডার ?
এটা লেখাকালীন সময়ে আমার পরিচিত একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ওয়াশিং মেশিন যদি কিনেন তাহলে কোনটা বেছে নিবেন, ফ্রন্ট লোডার নাকি টপ লোডার ? উত্তর এলো, ফ্রন্ট লোডার । কারন জানতে চাওয়াতে জানা গেলো, দেখতে ভাল লাগে । আমার নিজের কাছে আবার দেখতে ভাল লাগে, টপ লোডার ।
আমরা অনেকেই এ দু’টোর পার্থক্য সম্পর্কে জানি না । দেখতে ভাল লাগার দরুন যার যেটা ভাল লাগে সেটা আমরা বেছে নেই । কিন্তু আসলেই এভাবে না জেনে কিনে ফেলাটা কি উচিত ? অবশ্যই না । তাহলে এ দুটোর মধ্যে মূল পার্থক্যগুলো আমরা একটু জেনে নেই –
টপ লোডার
সুবিধা –
- কাপড় চোপড় খুব দ্রুত ধুয়ে ফেলে ।
- তুলনামূলক কম দামে কেনা যায় ।
- ওজনে হালকা এবং সহজে নাড়া চাড়া করা যায় ।
অসুবিধা –
- কাপড় যত্নসহকারে ধুতে পারে না ।
- ফ্রন্ট লোডারের তুলনায় বেশি পানির প্রয়োজন পড়ে ।
- কুসুম গরম পানি থেকে গরম পানিতে ধোয়ার ক্ষেত্রে বেশি বিদ্যুত খরচ হয় ।
ফ্রন্ট লোডার
সুবিধা –
- কাপড় খুব যত্নসহকারে ধোয়া যায় ।
- সাধারনত অল্প পানিতেই ধুয়ে ফেলা যায় ।
- কুসুম গরম পানি থেকে গরম পানিতে ধোয়ার ক্ষেত্রে অল্প বিদ্যুত খরচ হয় ।
- অল্প ডিটারজেন্ট লাগে ।
অসুবিধা –
- কাপড় ধুতে অনেক সময় নেয়, কোন কোন ক্ষেত্রে ৩ ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যায় ।
- সাধারনত দাম বেশি থাকে ।
- ওজনে যথেষ্ট ভারী ।
তবে অবশ্যই ওয়াশিং মেশিনটি কেনার আগে সেটার আয়তন আপনার ঘরে ঠিকমতো মানানসই হচ্ছে কিনা সেটা দেখে নেওয়া ভাল। বড় পরিবারের জন্য ভাল হয় টপ লোডার কিনলে, কারন সেটার ধারনক্ষমতা বেশি হয়ে থাকে । আর ছোট জায়গার ক্ষেত্রে ফ্রন্ট লোডার কেনাটা সবচেয়ে ভাল হবে । তাছাড়া, কার্যকারিতার দিক থেকেও ফ্রন্ট লোডার, টপ লোডার থেকে এগিয়ে আছে । তবে আমাদের দেশে টপ লোডার কেনার হার বেশি যেহেতু এটি যথেষ্ট কম দামে কেনা যায় ।
ওয়ারেন্টি তথ্য এবং অন্যান্য বিষয়
রেফ্রিজারেটর বা এয়ার কন্ডিশনার কেনার সময় আমরা যেমন দেখি যে কম্প্রেশার গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি কত বছরের ঠিক তেমনি ওয়াশিং মেশিন কেনার সময় মটর ওয়ারেন্টি একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয়। ওয়াশিং মেশিন কেনার সময় অবশ্যই আলাদাভাবে লক্ষ্য করবেন ঐ প্রতিষ্ঠান কত বছরের মটর, সার্ভিস এবং স্পেয়ার পার্টসের গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি কত বছরের আছে। আমাদের জানামতে ব্র্যান্ড এবং মডেলভেদে মটর ওয়ারেন্টি সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।
আর বেশি কথা না বাড়িয়ে বলবো যেখান থেকেই কিনুন না কেন ভালো কোম্পানী থেকে কেনার অনুরোধ থাকলো যারা সেবা এবং মান বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এ লেখা সম্পর্কে আপনাদের মতামত, ভাবনা আমাদের জানাতে ভুলবেন না। ইনশাআল্লাহ আমরা শীঘ্রই আসছি আমাদের পরবর্তী লেখা নিয়ে।